সরাইলে একটি দলিল নিবন্ধনে মৌখিক বাধায় ঘটে যায় নানা তুঘলকি কান্ড। নরসিংহপুর গ্রামের ঘটনায় উপজেলা সদরে তৈরী হয় পক্ষ বিপক্ষ। সামাজিক ভাবে নিস্পত্তির সুযোগ দেন সাব-রেজিষ্ট্রার। দুই সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও মিলেনি সমাধান। লিখিত অভিযোগ না থাকায় দলিলটি নিবন্ধনের জন্য সুপারিশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন। আবারও সময় চান একটি পক্ষ। এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে আনোয়ার হোসেনের সাথে সাব-রেজিষ্ট্রারের বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে কাজ ফেলে চলে যান সাব-রেজিষ্ট্রার (ডেপুটেশন) আব্দুল কাদের। দিনভর অপেক্ষার পরও তিনি ফিরে আসেননি। আটকে যায় দুই শতাধিক দলিল নিবন্ধনের কাজ। চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে দলিল লেখক ও ক্রেতা বিক্রেতার। কারণ গত দুই মাস ধরে সরাইলে প্রতি সপ্তাহে মাত্র একদিন হচ্ছে দলিল নিবন্ধনের কাজ। অফিস সহকারী, দলিল লেখক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, চুন্টা ইউনিয়নের নরসিংহপুর গ্রামের নওয়াব মিয়ার একমাত্র ছেলে সেলিম মিয়া ৬৪ শতক জায়গা বিক্রি করেন একই গোত্রের মাঞ্জু মিয়ার কাছে। গত ৬ জানুয়ারি ওই জায়গাটি রেজিষ্ট্রির জন্য অফিসে জমা দেন লেখক আব্দুল হাফিজ। জমা নেন কর্তৃপক্ষ। সরাইল সদরের কিছু লোক নিয়ে এসে দলিলটি নিবন্ধনের কাজে মৌখিক ভাবে বাঁধা দেন একই গ্রামের ওয়াদুদ মিয়া। সংঘাত সংঘর্ষের চিন্তা করে দুই পক্ষদ্বয়কে বিষয়টি নিস্পত্তির সময় দেন। ১৪ দিন পেরিয়ে গেলেও নিস্পত্তি করতে পারেননি তারা। গত ২০ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দলিলটি নিবন্ধনের বিষয়ে সাব-রেজিষ্ট্রারের খাস কামড়ায় বসে কথা বলেন সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আনোয়ার হোসেন। পক্ষদ্বয়ের চাপ ও ডিআরও মহোদয়ের নির্দেশের বরাদ দিয়ে আপাতত নিবন্ধন না করার কথা বলেন। এ ঘটনয় আনোয়ার হোসেন ও সাব-রেজিষ্ট্রারের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে সকাল ১১টার দিকে কাজ ফেলে চলে যান সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুল কাদের। অফিসের বাহিরে অপেক্ষমান কয়েকশত দাতা গ্রহিতার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়। দিনভর অপেক্ষার পরও আর ফিরে আসেননি সাব-রেজিষ্ট্রার। সপ্তাহে মাত্র ১দিন হয় নিবন্ধনের কাজ। সেইদিনটি বিফলে যাওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েন লেখক ও ক্রেতা বিক্রেতারা। ভেস্তে গেছে অনেকের জরূরী গুরূত্বপূর্ণ কাজ। নিবন্ধন বন্ধ রাখার মৌখিক অভিযোগকারী মো. ওয়াদুদ মিয়া বলেন, দাদার আমল থেকে ২০ শতক জায়গা ভোগ দখল করে আসছি। পুকুর দিয়েছি। আমাকে না জানিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। আমি লিখিত কোন অভিযোগ করিনি। কেন করলেন না? প্রশ্নের উত্তরে বলেন আমি বুঝতে পারিনি। দলিল লেখক আব্দুল হাফিজ বলেন, কাগজপত্রের ক্রুটি রাখিনি। দলিলটি জমা দেওয়ার পর স্যার নিবন্ধন হওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। ওয়াদ মিয়া মৌখিক বাঁধা দিয়েছেন। স্যার নিস্পত্তির জন্য সময় দিয়েছেন। নিস্পত্তিও করতে পারছেন না। দলিলও নিবন্ধন হচ্ছে না। ডিআরও স্যারও নাকি নিষেধ করেছেন। অফিস সহকারী মো. ফারূক মিয়া বলেন, নিবন্ধন না করতে মৌখিক অভিযোগ ছিল। রাজনৈতিক চাপও ছিল। তাই স্যার সামাজিক ভাবে বিষয়টি নিস্পত্তির জন্য এক সপ্তাহের সময় দিয়েছিলেন। প্রয়োজনে আবারও সময় নেয়ার কথা বলেছিলেন। সরাইল উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি সৈয়দ আলী আবদাল বলেন, সময় দেওয়ার পরও যেহেতু পক্ষদ্বয় নিস্পত্তি করতে পারেননি। সাব-রেজিষ্ট্রার মহোদয় দলিলটি নিবন্ধন করতে পারতেন। উনি চলে যাওয়ায় লোকজন অনেক কষ্ট করেছেন। এ বিষয়ে জানতে সাব-রেজিষ্ট্রার (ডেপুটেশনে থাকা) আব্দুল কাদিরের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত: গত দুই মাস আগে বদলি হয়ে যান সাব-রেজিষ্ট্রার শেখ মো. মছিউল ইসলাম। ডেপুটেশনে আসেন আশুগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার ফরিদা আক্তার। তিনি সপ্তাহে বসতেন ২ দিন। স’ানীয় কতিপয় দলিল লেখকের অসৌজন্যমূলক আচরণে তিনি বিব্রতবোধ করেন। নবীনগর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার আব্দুল কাদিরকে ডেপুটেশনে দেওয়া হয় সরাইলে। তিনি সরাইলে সপ্তাহে মাত্র ১ দিন (বৃহস্পতিবার) কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। আর এভাবেই চলছিল। এখন দলিল নিবন্ধনকে কেন্দ্র করে আবারও অচলাবস্থা।
মাহবুব খান বাবুল
woow